Saturday, July 12, 2014

আর্জেন্টিনা সমর্থকের কান্ড!


ঢাকা : গোপাল চন্দ্র শীল। আর্জেন্টিনার ঘোরতর ভক্ত। পেশায় একজন নরসুন্দর। আর্জেন্টিনার সাফল্যে আত্মহারা সে। এ আনন্দ উদ্যাপনে তার ইচ্ছা এলাকার মানুষকে বড় কোন এক উপহার দেবেন। কিন্তু তিনি তো ধনী নন। সেলুনে চুল ছেঁটে সংসার চালান।

আর্থিক অসঙ্গতি থাকলেও এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিলেন তিনি। তার এলাকায় ৩ দিন ধরে বিনা পয়সায় প্রায় তিনশ’ গরীব ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের চুল ছেঁটেছেন। এখনও ছাঁটছেন। টাকা ছাড়া চুল ছাঁটছেন প্রাপ্তবয়ষ্কদেরও। তবে শিশুদের ভিড় থাকায় বড়রা সুযোগ পাচ্ছেন কম। ঘটনাটি রাজধানীর পশ্চিম আগারগাঁও এলাকার মমতাজ মসজিদ সংলগ্ন এলাকায়।

গোপাল উদ্যোগ দিয়েছেন, ১৩ জুলাই রোববার রাতে জার্মানি বনাম আর্জেন্টিনার ফাইনালে তার প্রিয় দল আর্জেন্টিনা যদি চ্যাম্পিয়ন হয় তবে অন্তত আরও কয়েকদিন তার সেলুনে বিনা পয়সায় শিশুদের চুল ছাঁটবেন।

প্রথমে সাধারণ মানুষ গোপালের এ উদ্যোগকে নিছক পাগলামি মনে করলেও পরে তাকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন। বাহবা দিচ্ছেন আর্জেন্টিনার অপর সমর্থকরা।

গোপালের সেলুনে শিশুদের ভিড়। তারা চুল কাটার জন্য গোপালের দোকানে সকাল থেকে অপেক্ষা করছে। কারও গায়ে আর্জেন্টিনার আকাশি সাদা জার্সি। কারও গায়ে ব্রাজিলের হলুদ সবুজ জার্সি।

শিশুরা তাদের প্রিয় খেলোয়াড়দের মডেলে চুল ছাঁটতে চাইছে। কেউ চাইছে মেসি কাটিং, কেউবা নেইমার কাটিং, আবার কেউ ক্লোসা কাটিং। গোপালও সেই অনুযায়ী ছাঁট দিচ্ছেন। না হলেও ক্ষতি নেই। বিনা পয়সায় কিছু পাওয়ার আনন্দই আলাদা।

সেলুনে একজন শিশুদের সিরিয়াল লিখে যাচ্ছেন। চুল ছাঁটা শেষ হলে শিশুদের হাতে কালি দিয়ে একটি চিহ্ন একে দিচ্ছেন। প্রত্যেক শিশুর হাতে একটি করে চকলেট গুঁজে দিচ্ছেন।

গোপাল চন্দ্র শীলের (৩৮) বাড়ি ঝালকাঠি জেলার কাঁঠালিয়া থানার আনলবুনিয়া গ্রামে। পেশার ঢাকায় এসেছিলেন ১৯৮৯ সালে। তার স্ত্রী অনিতা রানী শীল এবং দুই মেয়ে সোনালি ও রূপালি। এই নিয়ে তার ছোট সংসার।

গোপাল ১৯৮৬ সালে অনুষ্ঠিত মেক্সিকো বিশ্বকাপে ম্যারাডোনা ও আর্জেন্টিনার খেলা দেখে ভক্ত হয়েছিলেন। গোপাল জানান, ১৯৯০ সালের ইতালিতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের ফাইনালে জার্মানি আজেন্টিনাকে হারিয়েছিল। সেদিন কেঁদেছিলাম।

১৯৯৪, ১৯৯৮, ২০০২, ২০০৬ ও ২০১০-এর ফুটবল বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে খালিহাতে ফিরতে হয়েছে। দীর্ঘ অপেক্ষার প্রহর যেন আর ফুরোয় না। কেটে গেছে ২ যুগ। পেরিয়ে গেছে পাঁচটি বিশ্বকাপের আসর। কিন্তু আর্জেন্টিনার অপেক্ষার পালা এবার শেষ।

আর্জেন্টিনা ফাইনালে ওঠেছে সেই খুশিতে আত্মহারা গোপাল নিয়েছেন এ ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। তিনি বলেন, দীর্ঘ দিন পর আর্জেন্টিনা ফাইনালে উঠেছে। ৯ জুলাই খেলার দিন মনে মনে ভেবেছিলাম যদি আমার প্রিয় দল জেতে তাহলে একটা কিছু করবো। কিন্তু কি করবো তা ভেবে পাচ্ছিলাম না।

গোপাল বলেন, প্রিয় আর্জেন্টিনা জিতল। আমার তেমন আর্থিক সামর্থ্য নেই। ক্ষৌরকর্মই একমাত্র ভরসা। এর সামান্য আয়ে সংসার চলে। ভালো কিছু করতে গেলে প্রচুর টাকার দরকার। শেষে এলাকাবাসী কয়েকজনের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিলাম, আমি ক্ষৌরকার তাই এই কাজ দিয়েই স্মরণীয় কিছু করা যাবে। সেই চিন্তা থেকে খেলা শেষে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের চুল কাটা শুরু করলাম। এখনও চালিয়ে যাচ্ছি।

গোপাল জানান, গত দু’দিনে কয়েকশ শিশু ও সাধারণ মানুষের বিনা পয়সায় চুল কেটেছি। এতে আমার কোন ক্লান্তি নেই। এলাকার শিশুরা আমাকে খুব পছন্দ করে। সবাই গোপাল মামা বলে ডাকে। এজন্য আমার কাছে তারা আসে।

এলাকাবাসী জানায়, গোপাল চন্দ্র শীল আগারগাঁও এলাকায় খুবই জনপ্রিয়। প্রায় ২১ বছর ধরে পশ্চিম আগারগাঁও মমতাজ মসজিদের পাশে কাজ করছেন। শিশু থেকে বুড়ো সবাই তাকে পছন্দ করে। শিশুদের চুলছাঁটা কঠিন কাজ। সবাই তা পারে না। গোপাল এ কাজে বেশ দক্ষ। এজন্য বেশিরভাগ শিশুরা তার কাছে চুল কাটাতে আসে। শিশুদের অভিভাবকরাও তার ওপর আস্থাশীল।

স্থানীয়রা জানান, চুল কাটতে অন্তত ৪০-৫০ টাকা খরচ হয়। সেই হিসেবে গোপালদার এ উদ্যোগে এলাকার সুবিধাবঞ্চিত ও দরিদ্র শিশুদের জন্য কিছুটা হলেও উপকারে আসছে।

কয়েকজন জানান, প্রথম প্রথম গোপালের এ উদ্যোগকে নিছক পাগালামি ভেবেছিলাম। কিন্তু পরে বুঝতে পারি কোন একটা মহৎ উদ্দেশ্য এর মধ্যে আছে। তাই তার কর্মকান্ডে আমরাও আনন্দ পাচ্ছি।

এক শিশুর মা জানান, আমার ছেলে গতকাল সারাদিন অপেক্ষায় ছিল গোপালের হাতে চুল কাটবে বলে। কিন্তু সিরিয়াল পাচ্ছিল না। আজকে তার চুল ছাঁটা হয়েছে। তার এই উদ্যোগে আমরা খুশি।

স্থানীয় দোকানীরা জানান, গোপালদা কথা দিয়েছিলেন আর্জেন্টিনা ফাইনালে গেলে তিনি স্মরণীয় কিছু একটা করবেন। গত দু’দিন ধরে গোপালদার সেলুনে শিশুদের ভিড় লেগেই আছে। যেন চুল ছাঁটার উৎসব।

No comments:

Post a Comment